মনের আশা পূরণের উপায় ইসমে আজম যেভাবে কাজ করে

 **মনের ইচ্ছা পূরণের অদ্বিতীয় আমল: ইসমে আজমের বিস্তারিত মাহাত্ম্য**


 **ভূমিকা**

মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে নানা রকম ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা জাগে। কখনো তা পার্থিব সুখ-শান্তির জন্য, আবার কখনো আধ্যাত্মিক শান্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কীভাবে আমরা আমাদের মনের এই ইচ্ছাগুলো আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দেব? ইসলামী শরিয়তে এর উত্তম সমাধান হলো **ইসমে আজম**। এটি এমন একটি আমল, যার মাধ্যমে বান্দা সরাসরি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নামসমূহের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রার্থনা করে। আজকের এই পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় আমরা ইসমে আজমের সংজ্ঞা, গুরুত্ব, পাঠের নিয়ম, সময়, ফজিলত এবং সংশ্লিষ্ট দোয়াসমূহ নিয়ে বিস্তারিত জানবো।


---


**ইসমে আজম কী?**

ইসমে আজম হলো আল্লাহ তাআলার সেই পবিত্র নামসমূহ, যেগুলো তাঁর মহান গুণাবলী ও ক্ষমতার প্রতীক। এই নামগুলো দিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ বিশেষভাবে সাড়া দেন। এটি আরবি শব্দ; **"ইসম"** অর্থ "নাম" এবং **"আজম"** অর্থ "মহান" বা "শ্রেষ্ঠ"। অর্থাৎ, **ইসমে আজম অর্থ "আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নামসমূহ"**। 


**ইসমে আজমের বৈশিষ্ট্য:**

- এটি কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর গুণবাচক নাম।

- বিশেষ এই নামগুলো দিয়ে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হয়।

- এটি ঈমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।


---


 **ইসমে আজমের গুরুত্ব**

ইসলামে ইসমে আজমের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হলো:


**১. দোয়া কবুলের সর্বোত্তম মাধ্যম**

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  

> **"আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে; যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করবে ও আমল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"** (বুখারী, মুসলিম)  

এই নামগুলোর মধ্যে কিছু নাম বিশেষভাবে ইসমে আজম হিসেবে গণ্য, যা দিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা দ্রুত কবুল করেন।


 **২. মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে**

যে কোনো হালাল ও নেক ইচ্ছা পূরণের জন্য ইসমে আজম পাঠ করা যায়। যেমন—রিজিক বৃদ্ধি, রোগমুক্তি, বিপদ থেকে মুক্তি ইত্যাদি।


 **৩. আত্মিক প্রশান্তি লাভ**

আল্লাহর নামের জিকিরে মন শান্ত হয় এবং ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায়।


---


 **ইসমে আজম কখন পড়বেন?**

ইসমে আজম পাঠের জন্য কিছু বিশেষ সময় ও মুহূর্ত রয়েছে, যখন এর প্রভাব অনেক গুণ বেড়ে যায়:


 **১. নামাজের পর**

- **ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর** সালাম ফেরার পর ইসমে আজম পাঠ করা উত্তম।

- **তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইলের সময়** রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়।


 **২. সিজদার মধ্যে**

সিজদা হলো বান্দার আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থা। এ সময় ইসমে আজম পাঠ করলে দোয়া দ্রুত কবুল হয়।


**৩. জুমুআর দিন**

জুমুআর দিনে বিশেষ করে **আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত** সময়টিকে দোয়া কবুলের মুহূর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।


---


 **ইসমে আজম কীভাবে পড়বেন?**

ইসমে আজম পাঠের সঠিক নিয়ম হলো:


 **১. পবিত্রতা অর্জন**

- অজু করে পবিত্র হয়ে নিন।

- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে বসুন।


**২. নামাজ আদায় করুন**

- ফরজ বা নফল নামাজ পড়ে নিন।

- নামাজের শেষ সিজদায় বা সালাম ফেরার পর ইসমে আজম পাঠ করুন।


**৩. দোয়া ও ইস্তেগফার**

ইসমে আজম পাঠের পর নিজের মনের ইচ্ছাগুলো আল্লাহর কাছে জানান এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন।


---


 **ইসমে আজমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া**

 **দোয়া-১ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৩)**

**আরবি**:  

> وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ  


**উচ্চারণ**:  

> *"ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদ, লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রহমানুর রহিম।"*  


**অর্থ**:  

> "আর তোমাদের ইলাহ (উপাস্য) একমাত্র ইলাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যিনি পরম দয়ালু, অতি মেহেরবান।"  


**দোয়া-২ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১)**

**আরবি**:  

> اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ  


**উচ্চারণ**:  

> *"আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম।"*  


**অর্থ**:  

> "আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক।"  


---


**ইসমে আজম পাঠের ফজিলত**

১. **দোয়া দ্রুত কবুল হয়** – আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নামে প্রার্থনা করলে তিনি সাড়া দেন।  

২. **বিপদ-আপদ দূর হয়** – বিশেষ করে অভাব, রোগ-শোক ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মেলে।  

৩. **রিজিকে বরকত বৃদ্ধি পায়** – হালাল রুজি লাভের জন্য এটি বিশেষ কার্যকর।  

৪. **আত্মিক শান্তি লাভ** – আল্লাহর স্মরণে মন প্রশান্ত হয়।  


---


**সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ**

- **নেক নিয়ত**: শুধুমাত্র হালাল ও ভালো উদ্দেশ্যে দোয়া করুন।  

- **ধৈর্য ধরা**: দোয়া কবুল হতে সময় লাগতে পারে, তাই হাল ছাড়বেন না।  

- **অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে আমল**: নামাজ, তাওবা, সদকাহর পাশাপাশি ইসমে আজম পাঠ করুন।  


 **উপসংহার**

ইসমে আজম হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি শুধু মনের ইচ্ছা পূরণের জন্যই নয়, বরং ঈমান বৃদ্ধি ও আত্মিক উন্নতিরও উপায়। নিয়মিত এই আমল করলে ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আমাদের সব চাওয়াগুলো পূরণ করবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি দান করবেন।  


**আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহান আমলটি যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন। আমিন!**  

মন্তব্য

Previous Post Next Post

Videos